সৌদি শর্ত মেনেই ২৪ মে থেকে বিমানের ফ্লাইট

সৌদি সিভিল এভিয়েশনের দেয়া কঠোর শর্তারোপের কারণেই বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের ৪ দিনের শিডিউল ফ্লাইট চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়। কারণ এসব ফ্লাইটের যাত্রীদের সৌদি আরব যাওয়ার পরই নিজ খরচে ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন বাবদ হোটেলে থাকা-খাওয়া এবং দুই দফা করোনা পরীক্ষা করানোর খরচ বিমানের টিকিটের টাকা থেকেই সৌদি কর্তৃপক্ষ কেটে নেয়ার কথা জানিয়েছে। এমন শর্তারোপ জুড়ে দেয়ায় বিমান কর্তৃপক্ষ ২০ থেকে ২৪ মে’র চার দিনের জন্য সব শিডিউল ফ্লাইটগুলো বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে।

এ দিকে হঠাৎ করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ৪ দিনের মোট ১২টি ফ্লাইট বাতিল হওয়ার কারণে সৌদিগামী ফ্লাইটের যাত্রীরা পড়েছেন চরম বেকায়দার মধ্যে। তাদের অনেকের প্রশ্ন, টিকিট কাটা হয়েছে, করোনা টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। এরপরও কেনো তারা তাদের গন্তব্যে যেতে পারবেন না? এর কারণ জানতে দু’দিন ধরে মতিঝিলের বিমানের বলাকা ভবন ও কুর্মিটোলার বলাকা ভবনে অনেকে ভিড় করছেন।

সৌদিগামী যাত্রীদের ক্ষোভ, তারা বিমানের বলাকা ভবনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও কোনো কর্মকর্তার কাছ থেকে ফ্লাইট না যাওয়ার কারণ জানতে পারছেন না। কেউ কিছু বলছেন না। এ সময় কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলছেন, তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে দু’দিন পর। তারা এখন কী করবে।
সৌদিগামী আবদুর রাজ্জাক নামে একজন আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের বলেন, সকাল থেকে এখানে এসে কারণ জানতে অপেক্ষা করছি।

কিন্তু কর্মকর্তারা আমাদের মতো রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের পাত্তাই দিচ্ছেন না। তবে দেখছি যারা নগদ টাকা নিয়ে এসেছে তাদেরকে বিমানের বলাকা ভবনের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যারা টাকা আনতে পারেনি তাদের চলে যেতে বলা হচ্ছে। যাত্রীদের একজন বলছেন, এই মুহূর্তে হুট করে আমি কোত্থেকে ৫০-৬০ হাজার টাকা জোগাড় করবো।

গতকাল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানান, সৌদি সরকার ২০ মে রাত ১২টার পর থেকে তার দেশে প্রবেশের আগে নিজ খরচে ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করার শর্তারোপ করেছে। যারা এখন নিয়ম মেনে যেতে পারবে, তাদেরকেই বিমান কর্তৃপক্ষ পরবর্তী ফ্লাইট ধরার টিকিট কনফার্ম করে দেবে। আর যারা কোয়ারেন্টিন বাবাদ টাকা দিবে না, তাদের যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভিসা বাতিলের বিষয়টি দেখার দায়িত্ব বিমানের না।

কারণ এবার সৌদি কর্তৃপক্ষ বিমানকে ই-মেইলে শর্ত দিয়ে বলেছে, যত যাত্রী আসবে সব যাত্রীর কোয়ারেন্টিন, করোনা টেস্ট ও অন্যান্য খরচ বিমানের টিকিট থেকেই তারা এডজাস্ট করে কেটে নেবে। আর সৌদি সরকারের নতুন এই সিস্টেম ঠিক করতে দু-এক দিন সময় দরকার। যেমন যেসব যাত্রী সৌদি আরব যাওয়ার জন্য বিমানে বুকিং দেবে, কনফার্ম যাত্রীদের একটা তালিকা বিমান কর্তৃপক্ষই দু’দিন আগে সৌদি সরকারের কাছে পাঠাবে। সেই তালিকা অনুযায়ী যাওয়ার পর যাত্রীরা সৌদি আরবের নির্ধারিত হোটেলে গিয়ে উঠবেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে বিমানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলেন, আগামী ২৪ মে থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সীমিত আকারে (রিয়াদের উদ্দেশে) ফ্লাইট পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এরপর সৌদি আরবের ৩ স্টেশনে (জেদ্দা-রিয়াদ-দাম্মাম) সীমিত আকারে ফ্লাইট যাবে। তারা জানান, ২৪ মে দুবাইয়ের উদ্দেশেও বিমানের একটি ফ্লাইট ছেড়ে যাবে। তবে এসব স্টেশনগুলোতে বিমানের ১৬২ সিটের (বোয়িং-৭৩৭) ছোট এয়ারক্রাফট দিয়ে ফ্লাইট চালানো হবে।

সেই হিসাবে দুবাইয়েও সপ্তাহে দুটি এবং সৌদি আরবের ৩ স্টেশনে সপ্তাহে ২টি করে মোট ৬টি ফ্লাইট চলাচল করবে। যাত্রী পাওয়া গেলে তখন আরো ফ্লাইট বাড়ানো হবে বলে জানান তারা। এ দিকে কুয়েত, বাহরাইন, দুবাই, আবুধাবিসহ বিভিন্ন দেশের সাথে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে দেশে আটকেপড়া প্রবাসী শ্রমিকরা পড়েছেন চরম বেকায়দায়। এর মধ্যে সৌদি আরবে ৭ দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন চালু হওয়ার পর আরো বিপাকে পড়েছেন জনশক্তি ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ী ও বিদেশগামী শ্রমিকরা।

এ প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা) এর সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সংসদের এমপি বেনজির আহমদ বুধবার বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমাদের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সাথে বৈঠক করে করণীয় ঠিক করা হবে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এর আগে সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশে কর্মী যাওয়া নিয়ে সমস্যা হয়েছিল। তখনো অনেক শ্রমিক দেশে আটকে পড়েছিল।

সেটিও সমাধান করে বেশ কিছু শ্রমিককে তখন পাঠানো সম্ভব হয়েছিল। এই কয়েক দিনে আরো ৪০ হাজারের মতো শ্রমিক চলে যেতে পারতো। কিন্তু ফ্লাইট না চলার কারণে তাদের পাঠানো সম্ভব হয়নি। দেখা যাক কিভাবে সমাধান করা যায়। আল আব্বাস ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মুজিবুর রহমান মুরাদ বলেন, সৌদি আরবে কর্মীদের ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আমরা তো মহিলা কর্মী পাঠাচ্ছি। আর মহিলা পাঠাতে কর্মীর কাছ থেকে কোনো টাকা নেয়া হয় না।

নিয়োগকারী কোম্পানি টিকিট, মেডিক্যাল খরচসহ সব কিছু তারাই বহন করে। আমরা শুধু প্রসেসিং করে পাঠাই। এখন কোয়ারেন্টিন খরচের জন্য অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা খরচ করে কর্মী পাঠানো কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। এর একটা দ্রুত সমাধান হওয়া দরকার। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাংক লোন নিয়ে বেসরকারিভাবে টিকা কেনা যায় কি না সেটি নিয়েও আমাদের এখন ভাবার সময় এসেছে। কারণ টিকা সমস্যার কারণেই কিন্তু বিভিন্ন শ্রমবান্ধব দেশ আমাদের দেশ থেকে কর্মী নিতে অনীহা প্রকাশ করছে।

কর্মীদের টিকা দিয়ে পাঠাতে পারলে তখন সব দেশই কর্মী নেয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখাবে বলে তিনি মনে করেন। গ্রিনল্যান্ড ওভারসিজের স্বত্বাধিকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই সৌদি সরকারের ৭ দিনের কোয়ারেন্টিন চালু প্রসঙ্গে বলেন, সৌদি সরকার যখন যে আইন চালু করে, সেই নিয়ম মেনেই আমাদেরকে শ্রমিক পাঠাতে হবে। এই নিয়মের ব্যত্যয় হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা আমার ৪০ বছরের ব্যবসায়ী জীবনে দেখিনি বলেও জানান তিনি।

সূত্র : নয়া দিগন্ত